-->

২০১৮ সালের এশিয়া কাপ এবং আমাদের বিজয় ; গুঞ্জন রহমান


আমাদের একটা এশিয়া কাপ, নিদেনপক্ষে যেকোনো একটা বহুদেশীয় শিরোপা জেতা খুব জরুরী হয়ে গেছে – এটা মানি। কিন্তু এবারই, মানে এই এশিয়া কাপই তার জন্য সবচেয়ে মোক্ষম সুযোগ ছিলো – এটা মানি না। আপনি বলতে পারেন, আমার ক্রিকেটিয় মস্তিষ্ক তেমন কার্যকর নয়, বলতে পারেন আমি খেলার খ-ও বুঝি না, আমি সেসব মেনে নেবো, কিন্তু বাংলাদেশ এবার এশিয়া কাপের শিরোপার দাবীদার ছিলো, নিদেনপক্ষে ফেভারিট ছিলো – এটা আমি কিছুতেই মানবো না। বাংলাদেশ অতি অবশ্যই এই আসরে আন্ডারডগ হিসেবে অংশগ্রহণ করেছে। তারপরও তারা যে ফাইনালে খেলেছে, মাত্র ২২২ রানের পুঁজি নিয়ে শেষ বল পর্যন্ত, আই রিপিট, ৩০০তম বল পর্যন্ত লড়েছে – এটাই সম্ভবত আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সাফল্য।

এবারের এশিয়া কাপ আয়োজন করা হয়েছে এমন একটা দেশে এবং এমন একটা মৌসুমে, যখন সেদেশে ক্রিকেটের মতো দীর্ঘসময় মাঠে অবস্থান করার মতো খেলা আয়োজনের উপযুক্ত মৌসুম নয়। কার আগ্রহে আরব আমিরাতের প্রচণ্ড গরমে বছরের এই সময়টায় এই আসর আয়োজন করা হলো, তা আমার জানা নেই। ক্রিকেটাররা তো বলির পাঁঠা, মাঠে নামতে বাধ্য। তারা মাঠে নেমেছে এবং সম্ভবত গোটা দলটাই সর্বোচ্চ পর্যায়ের শারীরিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। সাকিব আল হাসান টুর্নামেন্টের আগে থেকেই পুরোপুরি ফিট ছিলেন না, তথাপি তাঁকে বিশ্রাম না দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দলের সাথে। তিনি মাঠে নেমেছেন, খেলেছেন, ম্যাচ জিতিয়েছেনও। তা করতে গিয়ে আঙুলের চোট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আঙুলের ভেতর হাড়ের কাছে পুঁজ জমে বিশ্রী অবস্থা। এমনকি ব্যবস্থা নিতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা দেরি হয়ে গেলে তাঁর সেই আঙুল কিংবা হাতটাই হয়তো কেটে বাদ দিতে হতো! ... এতটা খারাপ পর্যায়ে আমরা আমাদের সেরা খেলোয়াড়কে, সব রকমের খেলা মিলিয়ে একাধিকবার বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ নির্বাচিত হওয়া খেলোয়াড়কে ঠেলে দিতে পারলাম! কেন? না, আমাদের একটা এশিয়া কাপ জেতা জরুরী হয়ে গেছে!

মুশফিকও টুর্নামেন্টের আগে থেকেই পাঁজরের হাড়ে চোট নিয়ে ভুগছিলেন। তিনিও ছুটি পাননি। তাঁকে যেতে হয়েছে আমিরাতে। প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি, তৃতীয় ম্যাচে ফিফটি করে তাঁকে দুই দুইবার দলের ত্রাণকর্তা হতে হয়েছে। ম্যাচসেরাও হয়েছেন সেই দুই ম্যাচে। কিন্তু তাতে তো পাঁজরের ব্যাথা কমেনি, বরং আঘাত বেড়েছে। পুরনো আঘাতের উপর নতুন আঘাত পেয়ে অবস্থা আরও গুরুতর হয়েছে।

মাশরাফির চোটকে আমরা আজকাল আর চোট বলেই ভাবি না, তিনি নিজেও ভাবেন না। যে কন্ডিশনে আমাদের দলটাকে খেলতে হয়েছে, তাঁর মতো শারীরিক অবস্থা নিয়ে সেই কন্ডিশনে খেলা যায় না। কিন্তু কী করার আছে? তিনি তো অধিনায়ক কোটায় খেলেন! আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই অধিনায়কটাই তাঁর চেয়ে ভালো আমাদের কেউ নেই, তাঁর কাছাকাছিও কেউ নেই। ফলে তিনি মাঠে নেমেছেন, নিজেকে উজাড় করে খেলেছেন, পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে পঞ্চান্ন বছরের প্রৌঢ়’র মতো দৈহিক ভঙ্গিতে তাঁকে ধুঁকতে ধুঁকতে রান-আপ নিতে দেখে কার কেমন লেগেছে জানিনা, আমার কান্না পেয়েছে। ... এবং এই অবস্থাতেও তিনি ভালো করেছেন। বল হাতে তো বটেই, অধিনায়ক হিসেবেও নিজের সেরাটা দিয়েছেন। নইলে যে ফর্ম আর যে শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ভেতর দিয়ে দলের বাকি সদস্যরা যাচ্ছিলো, তাতে করে এই দলটার সুপার ফোরেই ওঠার কথা নয়, ফাইনাল তো দূরে থাকুক।

তামিম ইকবাল একদম প্রথম ম্যাচের শুরুতেই যেভাবে চোট পেলেন, সেটা আসলে তাঁর একার চোট নয়, গোটা দলেরই চোট। সেই চোট নিয়েই তিনি যখন শেষ তিনটা ওভার ভাঙ্গা হাতে ব্যাট করতে নামলেন – এটাই ছিলো বাংলাদেশ দলের টিম-স্পিরিট। এই স্পিরিটটুকুই একমাত্র সম্বল ছিলো আমদের দলের, নইলে এই টুর্নামেন্টে দুটো ইনিংস মাঠে থাকার মতো কন্ডিশনও আমাদের দলটার থাকার কথা নয়। শুধু আমাদের কেন, গ্রিন এশিয়ার কোনো দলেরই থাকার কথা নয়। ভেবে দেখুন, শ্রীলংকা একটা ম্যাচও না জিতে ফিরে গেছে। শ্রীলংকা আর বাংলাদেশের জলবায়ূর বৈশিষ্ট্য প্রায় একই। দুই দেশের মানুষের শারীরিক গড়ন ও দেহ-বৈশিষ্ট্যও প্রায় এক। তাই যে কন্ডিশন শ্রীলংকার জন্য কঠিন, সেই কন্ডিশন আমাদের জন্যও কঠিন। আমিরাতের উষ্ণ বাতাবরণে তার ঠিক পাশাপাশি দেশগুলোর জন্য মানিয়ে নেয়া যত সহজ, ততটাই কঠিন ক্রমশ পূবের দিকে যেতে থাকা দেশগুলোর জন্য। তাই আফগানিস্তান, পাকিস্তান যত সহজে মানিয়ে নিতে পেরেছে, ততটাই কঠিন হয়ে গেছে শ্রীলংকা আর বাংলাদেশের জন্য। বাকি থাকলো ভারত।

ভারতের হিসাবটা একটু অন্যভাবে করা যাক। ভারতীয় স্পন্সররা আইসিসিকে সবচেয়ে বেশি টাকা দেয়, তাই আইসিসি ভারতের কথায় চলে বলাটাও আজকাল ভুল, বরং বলা উচিত – ভারতই আইসিসি, আইসিসি-ই ভারত। ফলে এরকম একটা বৈরি আবহাওয়ায়, চরমভাবাপন্ন বাতাবরণে খেলতে ভারতের প্রথম থেকেই অনাগ্রহ ছিলো। অনেক দেনদরবার করে যখন তাদের রাজি করানো গেল, তখন বেঁকে বসলেন দলীয় অধিনায়ক এবং আইসিসি’র স্পন্সরদের কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বড় “সিআইপি” বিরাট কোহলি। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, এই টুর্নামেন্টে খেলবেন না। এবং তিনি এলেনও না। তাঁর সাথে সুর মিলিয়ে আপত্তি জানাতে শুরু করেছিলেন আরেক “সিআইপি” সাবেক অধিনায়ক এমএস ধনি-ও। যা হোক, শেষ পর্যন্ত তাঁর আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় আসতেই হয় তাঁকে দলের সাথে। তবে শর্তসাপেক্ষে। কী সেই শর্ত?

এক. ভারতীয় দল একটা ভেনুতেই খেলবে এবং একটা শহরেই থাকবে। দুবাই আর আবুধাবি – দুই শহরে খেলা পড়লেও তারা এই দুই শহরে আসা-যাওয়ার ধকল নেবে না।
কিন্তু তা কী করে সম্ভব? গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচের সূচি না হয় সেভাবে সাজানো যায়, কিন্তু সুপার ফোর? সেখানে কোন্ দলের অবস্থান কী হবে, তা আগাম জানা যাবে কীভাবে? আর সেটা জানা না গেলে কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, কোন দল কোথায় খেলছে?
... এটা সামলানো আইসিসি/এসিসি’র কাজ, তাদেরকেই সামলাতে হবে, নয়তো ভারত খেলবে না।
দুই. টুর্নামেন্ট কমিটি সব দলের জন্য যে হোটেল বরাদ্দ দিয়েছে, সেই মানের হোটেলে ভারত থাকবে না। এমনকি সব দলের সাথেও তারা থাকবে না। তাদের থাকতে দিতে হবে তাদের পছন্দমতো হোটেলে।
এসিসি/আইসিসি’কে এই দুটো দাবীই মানতে হয়েছে। এবং তার খেসারত দিতে হয়েছে টুর্নামেন্টের বাকি দলগুলোকে। কীভাবে?

এক. সুপার ফোরে কোন চারটা দল যাবে, তা মোটামুটি গ্রুপের দুটো খেলা হতেই নিশ্চিত হয়ে গেছে। এবার তৃতীয়, অর্থাৎ সুপার ফোরের অবস্থান নির্ধারণী ম্যাচটা মাঠে গড়ানোর আগেই জানা গেল, গ্রুপে চার দলের অবস্থান চূড়ান্ত হয়ে গেছে! যেমন, বাংলাদেশ আফগানিস্তান ম্যাচের আগেই বাংলাদেশকে জানানো হলো, আপনারা জিতুন আর হারুন, আপনাদের অবস্থান বি-টু, অর্থাৎ আপনারা বি গ্রুপের দ্বিতীয় দল, যদিও সেই মুহূর্তে রানরেটের হিসাবে বাংলাদেশ আফগানিস্তানের উপরে এবং বাংলা-আফগান লড়াইয়েও জেতার সম্ভাবনা বাংলাদেশেরই বেশি। তথাপি, জিতলেও দ্বিতীয় হতে হবে – এই কথা যখন খেলোয়াড়দের জানিয়ে দেয়া হয়, তখন সেই খেলা যেমন গুরুত্ব হারায়, তেমনি খেলার প্রতি খেলোয়াড়দেরও আগ্রহ হারিয়ে যায়। দায়সারা রুটিন পালন করা খেলার জন্য কে জানপ্রাণ দিয়ে লড়ে? আমাদেরও হলো তাই। ফলে এত প্রতিকূল অবস্থাতেও দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যাওয়া দলের শরীরী ভাষাটাই নেতিবাচক হয়ে গেল। ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রার গরমে আট ঘণ্টা মাঠে থাকা, চার ঘণ্টা সড়কপথে যাতায়াত মিলিয়ে বারো ঘণ্টায় বিধ্বস্ত হয়ে যে খেলা খেলতে হলো, তা থেকে কোনো প্রাপ্তি নেই, উল্টো ম্যাচজয়ী মোমেন্টাম হাতছাড়া হয়ে গেল, এবং এই অবস্থাতেই নামতে হলো পরের খেলাটা খেলতে। সব মিলিয়ে আট ঘণ্টার ব্যবধানে আবারও রিপোর্টিং মাঠে, যেখানে কিনা, আগের ম্যাচে শরীর থেকে যে পরিমাণ পানি ও লবণ বেরিয়ে গেছে, তা পূরণ হতেই লাগে কম পক্ষে আটচল্লিশ ঘণ্টা! ফলাফল – ভারতের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ!

টুর্নামেন্টের সবগুলো দলকে এই দুবাই-আবুধাবি যাওয়া-আসার ধকল সামলাতে হয়েছে, পরপর দুই দিন পিঠাপিঠি ম্যাচ খেলতে নামতে হয়েছে, তাও দুই ভেন্যুতে – একমাত্র ভারত ছাড়া! সবগুলো ম্যাচ তো ভারতেরই জেতার কথা, এর ব্যাতিক্রমই বরং একটা অঘটন।

দুই. ভারত যে মানের হোটেলে থেকেছে, তার ভাড়া টুর্নামেন্ট কমিটির বাজেটের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে, এই বাড়তি খরচ সমন্বয় করতে গিয়ে টুর্নামেন্টের দৈর্ঘ্য কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে আয়োজকরা। ফলে, রিজার্ভ ডে-গুলো ফেলে দিতে হয়েছে, একেকটা দলকে মাঠে নামতে হয়েছে সর্বনিম্ন আট ঘন্টার ব্যবধানে, তাও আলাদা শহরে। এটা আইসিসি বা এসিসি’র টুর্নামেন্ট আয়োজনের সাধারণ নিয়মের পরিপন্থী, নজিরবিহীন একটি ঘটনা। এবং এই বাড়তি ধকলটা কিন্তু অন্য সব দলকে পোহাতে হলেও ভারত ছিলো তা থেকে মুক্ত! একটি দলকে বাড়তি আরামের ব্যবস্থা করে দিতে বাকি সব দলকে ভুগতে হলো এই পরিমাণ! এত বড় অবিচার আমাদের সহ্য করতে হলো, কেননা ভারত আইসিসিকে সবচেয়ে বেশি টাকা দেয়!

ভেবে দেখুন, এই রকম একটা পরিস্থিতিতে শারীরিক সক্ষমতায় অনেক বেশি এগিয়ে থাকা পাকিস্তান ও আফগানিস্তান যেখানে পেরে উঠলো না, বাংলাদেশ সেখানে ঠিকই ফাইনালে জায়গা করে নিলো। যে দলটার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ সদস্যের চারজনই চূড়ান্ত রকমের আনফিট, পঞ্চম জনও খুব সুবিধাজনক অবস্থানে নেই, এমনকি দুজন দলেরই বাইরে চলে গেছেন, এই পাঁচজন ছাড়া বাকিরা প্রায় সবাই বয়স, অভিজ্ঞতা এইসব বিবেচনায় ওই কন্ডিশনে নিতান্তই অচল, সেই দলটা ফাইনালে উঠে গেল। এর বেশি আর কী চাই?

এবার ফাইনাল ম্যাচের কথায় আসি। অলিখিত সেমিফাইনালের সেই অস্বাভাবিক আত্মনিবেদনে ভরা ম্যাচটায় আমাদের ছেলেরা যেমন উজাড় করে দিয়ে খেলেছেন, তেমনি তা করতে গিয়ে সত্যি সত্যিই তাঁরা উজাড় হয়েই গেছেন। মুশফিক পুরনো আঘাতে নতুন করে চোট পেয়েছেন, মাশরাফি ডানহাতের আঙুলে চোট পেয়েছেন, যেটা তাঁর বল করার হাত। মাহমুদুল্লাহ্ ডিহাইড্রেশনজনিত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ইমরুল কায়েস ক্লান্তির কাছে পরাজিত, মিরাজ, নাজমুল, মুসাদ্দেকরা এত কম বয়সে এত বড় মরুসাগরে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছেন। মুস্তাফিজ নিজের মতো করে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন নিজেকে ফিরে পাবার, রুবেলও দ্রুত মানিয়ে নিচ্ছেন। মুমিনুল, সৌম্যরা ঠিক কী পর্যায়ে আছেন, তাঁরা কোন ম্যাচে সুযোগ পাবেন, কখন একাদশের বাইরে চলে যাবেন, তা তাঁরা নিজেরাও জানেন না। একই অবস্থা লিটন দাসের, যিনি বরাবরের ওপেনিং পার্টনারকে হারিয়ে দিশেহারা! তামিমের সঙ্গে ওপেন করেন, দুচারটা উচ্চাভিলাষী শট খেলে ক’টা রান করেই আউট হয়ে যান – এই তাঁর খেলার নমুনা। এখানে তামিমই নাই, কার ভরসায় খেলবেন আর কাকেই বা উইকেটে রেখে ফিরবেন? ... এ রকম একটা দল নিয়ে ফাইনালে আপনি কী আশা করেন? আমার ধারণা ছিলো আগে ব্যাট করলে দেড়শো রানে বুকড হয়ে ৩০-৩৫ ওভারে সাত-আট উইকেটে হার, পরে ব্যাট করলে সাড়ে তিনশো রান চেজ করতে নেমে দেড়শো রানে বুকড!

কিন্তু সেই দলটাই স্বাভাবিক কম্বিনেশন বদলিয়ে লিটন-মিরাজের জুটিতে বিনা উইকেটে ১২০ রান তুলে ফেললো মাত্র বিশ ওভারে! সেই জায়গা থেকে যে দলটা ২২২ রান করবে, সেটা যেমন ভাবা যায় না; তেমনি, ৩৫ ওভার পর্যন্ত যারা খেলা দেখেছেন তারা ধারণাও করতে পারবেন না, দলটা শেষ পর্যন্ত ৪৯তম ওভারটা খেলেছে এবং রান দুশো’র ওপারে নিতে পেরেছে। এতটা অনুমান-অযোগ্য ব্যাটিং সাকিব-মুশফিক-মাশরাফি যুগের বাংলাদেশ দল আগে কখনো করেছে কিনা সন্দেহ। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ৫৮ রানে বুকড হয়ে যাওয়া ইনিংসটাও এর চেয়ে গোছালো ছিলো। ... এর কারণ কী? একটাই কারণ, ক্লান্তি আর গরমে খেলোয়াড়দের নাভিশ্বাস অবস্থা। আর এইটাই চেয়েছিলো ভারত। এইটাই তারা করিয়ে নিয়েছে আইসিসি-এসিসি’র ঘাড়ে বন্দুক রেখে। প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ কেন, সুপার পাওয়ার অস্ট্রেলিয়া কিংবা সাম্প্রতিককালে ওয়ানডে ক্রিকেটের সবচেয়ে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য পাওয়া দল ইংল্যান্ডও এই কন্ডিশনে পুরো একশো ওভার টিকতে পারতো না। বাংলাদেশ কিন্তু ভারতকে জয়সূচক রানটা করতে দিয়েছে তাদের ইনিংসের তিনশোতম বলে!

এসব হিসাব ভুলে যান। স্বাভাবিক ক্রিকেট-জ্ঞান সম্পন্ন কেউ, যিনি বাংলাদেশ দলের বর্তমান অবস্থা এবং ভারত-পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ফর্ম সম্পর্কে জানেন, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে একবারও কি ভেবেছিলেন, বাংলাদেশ ফাইনাল খেলবে? এমনকি আফগানিস্তানের সাথে গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচটা যদি মনোযোগ দিয়ে দেখে থাকেন, তো তারপরও কি মনে হয়েছে, বাংলাদেশ ফেভারিট?

বাংলাদেশের একটা কাপ জেতা খুব জরুরী। এশিয়া কাপে যেহেতু পরপর কয়েকটা ফাইনাল খেলা হয়ে গেল, তাই কাপটা এশিয়া কাপ হলে আরও ভালো। কিন্তু তারপরও ভেবে দেখুন – এই এশিয়া কাপটা আমাদের জেতার কোনো সুযোগই ছিলো না। আমরা বলেই নয় শুধু, ভারত ছাড়া কারোরই এটা জেতার সুযোগ ছিলো না, অধিকারই ছিলো না। সেই অধিকার অনেক আগে থেকেই রহিত করে রাখা হয়েছিলো রহিত শর্মাদের দাবীর মুখে। ... আমরা বলেই ওভাবে ধুঁকতে ধুঁকতে ফাইনালে গেলাম, সেখানে প্রথম ইনিংসে ওরকম চূড়ান্ত ভরাডুবির পরও দাঁতে দাঁত চেপে তিনশোতম বল পর্যন্ত লড়াই করলাম। এর বেশি আর কী চান? সোনার ডিম-মার্কা কাপের জন্য কি সেই সোনার ডিম দেয়া মুশফিক-মাশরাফিদের জবাই করে ফেলবেন নাকি! 

লিখেছেন  Goonjohn Rahman  
Recommendation

Related Posts
Disqus Comments
© Copyright 2018 মাশরাফি সমাচার - All Rights Reserved - Created By Maruf Ahmed Sumon